চট্টগ্রামরাজনীতি

নগর আওয়ামী লীগে ‘নেতৃত্বজট’, ঈদের পর সম্মেলনের প্রস্তুতি

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও তৎপরতা শুরু হয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাকর্মী ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সম্মেলন করার তাগিদের পর তৎপরতা শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ১০ বছর ধরে সম্মেলন না হওয়ায় সংগঠনের মধ্যে ‘নেতৃত্বজট’ সৃষ্টি হয়েছে। তাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে।

দলীয়সূত্র জানায়, ঈদের পর মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনেই সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সম্মেলনের বিষয়ে দিকনির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা পেলেই সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কেন্দ্র যেভাবে নির্দেশনা দেবে সেভাবেই সম্মেলন করা হবে।

২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে এই কমিটি করা হয়েছিল। এরপর সম্মেলন না হওয়ায় নেতৃত্বজট সৃষ্টি হয়। ইতোপূর্বে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার জন্য চারবার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে সম্মেলন পিছিয়ে যায়।

দীর্ঘদিন ধরে নগর আওয়ামী লীগ দুটি ধারায় বিভক্ত। নগর কমিটির সভাপতি ও সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে ঘিরে দুই ধারা চলমান। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর ওই ধারার নেতাকর্মীরা তার ছেলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে ঘিরে সক্রিয় রয়েছে। দুই গ্রæপকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ছাড়াও যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোও দুই ধারায় বিভক্ত।

দলীয় কোন্দলের বিষয়ে নগর কমিটির চার শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, রাজনীতিতে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা ও ধারা থাকবেই। তারপরও নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্মেলনের বিকল্প নেই।

এক কমিটিতেই ১১ বছর :

প্রতি তিন বছর পর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার নিয়ম থাকলেও ১১ বছরেও সম্মেলন হয়নি। একাধিকার তারিখ নির্ধারণ করেও সম্মেলন করতে পারেনি ক্ষমতাসীন দলটি। এবার কেন্দ্রীয় নেতারা সম্মেলন করার তাগিদ দিলেও তা নিয়ে সন্দিহান তৃণমূল নেতারা। নগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে। ২০১৩ সালে কেন্দ্র থেকে কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর কমিটির সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

দলীয়সূত্র জানায়, নগরের ৪৪টি ওয়ার্ডের ২৩টিতে সম্মেলন শেষ করা হয়। ১৩২ ইউনিটের মধ্যে বেশিরভাগেই সম্মেলন করা হয়েছে। তবে ১৫ থানার সম্মেলন করা যায়নি।

সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ বলেন, নগরের অসমাপ্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শেষ করে দ্রুত নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা প্রয়োজন। কারণ দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠেনি। সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূল বা কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন-পুরাতন নেতৃত্বের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হলে দল সাংগঠনিকভাবে অনেক চাঙ্গা হবে।

দু’পক্ষে বিরোধে ঝুলে যায় সম্মেলন :

নগরের ৩টি ওয়ার্ডের সম্মেলনকে ঘিরে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে বিবাদমান দুই পক্ষ। ওয়ার্ড সম্মেলনে ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগে কেন্দ্রে পাল্টাপাল্টি নালিশ করে দু’পক্ষ। এর জেরে গণভবনে দু’পক্ষকে ডাকা হয়। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন দু’পক্ষের নেতারা। এরপর কেন্দ্রের নির্দেশে তৃণমূলের সম্মেলন স্থগিত করা হয়।

নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে নগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হলে দল অনেক শক্তিশালী ও চাঙ্গা হবে।

সভাপতি ও সম্পাদক পদে দৌড়ঝাঁপ :

দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় নগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জট সৃষ্টি হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী সংখ্যা বেড়ে গেছে। বর্তমান সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী আবারও সভাপতি পদে থাকার সম্মতি ব্যক্ত করেছেন। তবে তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি করার পক্ষে মত দিয়েছেন অনেকেই। সেক্ষেত্রে সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।

সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে- নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, শফিক আদনান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা জামশেদুল আলম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *